বিভাগঃ ইউটিলিটি & পাওয়ার প্লান্ট।
বিষয়ঃ ইগনিশন সিস্টেম ( গ্যাস এবং পেট্রোল জেনারেটর)।
আজকে আলোচনার বিষয় হল ইগনিশন সিস্টেম।
তার আগে এই গ্রুপে এবং আমার ফেন্ডস লিষ্টে যে সকল সিনিয়র ভাই এবং স্যার আছেন। তাদের কাছে বিশেষ ভাবে আমার অনুরোধ রইল।
আমরা যারা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কর্মস্থলে আছি। আমরা যেন সবাই নিজের কর্মস্থলের কিছু দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা নিজ নিজ অবস্থান থেকে নবীনদের মাঝে শেয়ার করি।
হয়তো আমাদের ইচ্ছে থাকার সত্যেও নবীনদের জন্য চাকুরী বা কর্মস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি না।
নবীনদের জন্য কর্মস্থানের ব্যবস্থা না করতে পারলেও আমাদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা শেয়ারের মাধ্যমে নবীনরা কিছুটা হলেও নিজেদেরকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।
ইগনিশন সিস্টেমঃ
যে পদ্ধতিতে মিশ্রন(বায়ু +গ্যাস/পেট্রোল) কে প্রজ্জ্বলিত করার জন্য হাই ভোল্টেজ দরকার হয়। এবং হাই ভোল্টেজের সাহায্যে জ্বালানি মিশ্রনকে প্রজ্জ্বলিত করা হয়। তাকে ইগনিশন সিস্টেম বলে।
ইগনিশন সিস্টেমের কাজ ও মূলনীতিঃ
কম্বাসশন চেম্বারে জ্বালানি মিশ্রনকে কম্প্রেশন স্ট্রোকে সংকুচিত করে দহনের জন্য প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু নিজে প্রজ্জ্বলিত হতে পারে না।তাই এই সময় স্পার্ক প্লাগের মাধ্যমে হাই ভোল্টেজ দিয়ে জ্বালানি মিশ্রনকে দহন করা হয়।পিস্টন TDC তে পৌঁছানোর কয়েক ডিগ্রি পুর্বেই স্পার্কিং ঘটে।
এইভাবে প্রতিবার সংকোচনের শেষেই স্পার্ক ঘটতে থাকে।
আমরা জানি, মাইকেল ফ্যারাডের ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন নীতি অনুযায়ী, যখন কোন পরিবাহী এবং চুম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে আপেক্ষিক গতি থাকে তখন পরিবাহীতে ভোল্টেজ তৈরি হয়।
সুতারাং মাইকেল ফ্যারাডের ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন নীতি প্রয়োগ করেই ইগনিশন সিস্টেমের সাহায্যে হাই ভোল্টেজ স্পার্ক উৎপন্ন করা হয়।
ইগনিশন সিস্টেমের প্রকারভেদঃ
প্রধানত দুই প্রকার।
(১) ব্যাটারী কয়েল ইগনিশন সিস্টেম।
(২) ম্যাগনেটো ইগনিশন সিস্টেম।
ব্যাটারী কয়েল ইগনিশন সিস্টেম আবার দুই প্রকার।
(ক) কনভেনশনাল ব্যাটারী সিস্টেম।
(খ) ইলেকট্রনিক ইগনিশন সিস্টেম।
(২)ম্যাগনেটো ইগনিশন সিস্টেম আবার তিন প্রকার।
(ক) মুভিং কয়েল টাইপ
(খ) মুভিং ম্যাগনেট টাইপ
(গ)পোলার ইন্ডাক্টর টাইপ।
সাধারণত কনভেনশনাল ব্যাটারী টাইপ সিস্টেম ব্যবহার বেশি প্রচলিত।
তাই নিম্নে কনভেনশনাল ব্যাটারী টাইপ সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করা হলো।
কনভেনশনাল ব্যাটারী টাইপ সিস্টেমঃ
এই পদ্ধতিতে সাধারনত দুটি সার্কিট থাকে।
(১) প্রাইমারি সার্কিট
যে সব অংশ নিয়ে প্রাইমারি সার্কিট গঠিত
(ক) ব্যাটারী
(খ) ইগনিশন সুইচ
(গ) ইগনিশন কয়েল প্রাইমারী ওয়ান্ডিং
(ঘ) কন্ট্রাটর ব্রেকার পয়েন্ট এবং কনডেন্সার
(২)সেকেন্ডারি সার্কিট
যে সব অংশ নিয়ে সেকেন্ডারি সার্কিট গঠিত।
(ক) কয়েলের সেকেন্ডারি ওয়ান্ডিং
(খ) রোটর
(গ) ডিষ্ট্রিবিউর ক্যাপ
(ঘ) স্পার্ক প্লাগ
ইগনিশন সুইচ ON করলে কন্ট্রক্ট ব্রেকার পয়েন্ট যখন OFF অবস্থায় থাকে তখন পাইমারি সার্কিটের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। ফলে কয়েলের মধ্যে ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হয়।
যখন ডিষ্ট্রিবিউর শ্যাফটের ক্যাম দিয়ে কন্ট্রাক্ট ব্রেকার পয়েন্ট খুলে যায়। তখন কয়েলের ম্যাগনেটিক ফিল্ড নিস্তেজ হয়ে যায়।
ফলে প্রাইমারী কয়েলের মধ্যস্হ ইনডিউসড কারেন্ট ব্যাটারীর কারেন্টের সাথে একই দিকে প্রবাহিত হয়ে কনডেন্সারকে চার্জ করে।
এবং প্রাইমারী কয়েলে ২৫০ -৩০০ ভোল্ট উৎপন্ন হয়।
সাধারণত ইগনিশন কয়েলের ওয়ান্ডিং প্যাচ, প্রাইমারী ওয়ান্ডিং থেকে সেকেন্ডারি ওয়ান্ডিং এর প্যাআ বেশি থাকে।
(প্রাইমারী ওয়ান্ডিং ঃ সেকেন্ডারি ওয়ান্ডিং) =(১ ঃ ১০০)।
ম্যাগনেটিক ফিল্ড নিস্তেজ হওয়ার সময় বলরেখাগুলো সেকেন্ডারি ওয়ান্ডিং কে কর্তন করে।এতে সেকেন্ডারি ওয়ান্ডিং এ ১০০ গুন বেশি ভোল্টেজ উৎপাদিত হয়।
(ইগনিশন কয়েল একটি বিশেষ ধরনের ট্রান্সফরমার হিসেবে প্রাইমারি সার্কিটের লো ভোল্টেজে সেকেন্ডারি সার্কিটে হাই ভোল্টেজে রুপান্তর করে)।
সেকেন্ডারি ওয়ান্ডিং এ উৎপাদিত হাই ভোল্টেজ (২৫০০০ -৩০০০০ ভোল্ট) হাই টেনশন ক্যাবলের মাধ্যমে ডিস্ট্রিবিউর ক্যাপে যায়।সেখান থেকে রোটর হয়ে ইঞ্জিনের ফায়ারিং অর্ডার অনুযায়ী বিভিন্ন সিলিন্ডারের স্পার্ক প্লাগে চলে যায়।
সময়ের অভাবে ইগনিশন সিস্টেম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরতে পারলাম না।পরবর্তী পোষ্টে আরো বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে হাজির হব।
লোকমান হোসেন
ইঞ্জিনিয়ার (ইউটিলিটি & পাওয়ার প্লান্ট)
নোমান গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিস।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন