লেড এসিড ব্যাটারিঃ
--------------------
লেড এসিড ব্যাটারি তৈরি হয় শিশা এবং লেড অক্সাইড এর সাথে ৩৫% সালফিউরিক এসিড ও ৬৫% পানির মিশ্রন থেকে। এসিড পানির এইমিশ্রনটিকে বলে ইলেকট্রোলাইট যা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন তৈরি করে। ব্যাটারি টেস্টের জন্য হাইড্রোমিটার দিয়ে ইলেকট্রোলাইটে সালফিউরিক এসিডের পরিমান বা ঘনত্ব মাপা হয়। ব্যাটারিতে তে এই ইলেক্ট্রোলাইট আর মেটালের ক্যামিকেল রিয়্যেকশন এ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় ফলে মেটাল এসিডে দ্রবীভূত হয় এসিডে যা আবার চারজ দিলে মেটাল ও এসিডে রূপান্তর ঘটে।
মূলত দুই ধরনের ব্যাটারি দেখা যায়, ডিপ সাইকেল: যা অনেকবার চার্জ ডিসচার্জে সক্ষম, এই ধরনেরব্যাটারিকে মেরিন টাইপ ব্যাটারি ও বলা হয়। এগুলো সাধারনত এভাবে স্পেসিফিকেশন লেখাহয়
যেমন 12V7 AH ব্যাটারি অর্থাৎ এটি ১২ ভোল্ট এর এবং ঘন্টায় ৭এমপিয়ার
কারেন্ট দিতে সক্ষম বা ৭ এমপিয়ারে ১ ঘন্টা চলতে সক্ষম। এগুলোতে থাকে মোটাপ্লেট যা চার্জ দীর্ঘক্ষন ধরে রাখে ও
ধীরে ধীরে ডিসচার্জ করতে সক্ষম।
স্টার্টিং ব্যাটারি বা ক্র্যাংকিং ব্যাটারি:
এগুলো মূলত গাড়ির ব্যাটারি। গাড়ি বা
ইঞ্জিন স্টার্ট করতে বেশ শক্তিশালি
একটি স্টার্টিং মোটর থাকে এটিকে ১৫-৩০ সেকেন্ড চালু রাখলেই ইঞ্জিনস্টার্ট নিয়ে নেয়, অর্থাৎ খুব অল্প সময়ের জন্য ২৫-১৫০ এমপিয়ার কারেন্ট প্রবাহের প্রয়োজন হয় ঐ স্টার্ট এর পরে আর ব্যাটারির তেমন শক্তির কোন কাজ করতে হয় না বরং ইঞ্জিন এর অলটারনেটর হতে ব্যাটারি পুনরায় চার্জ হতে থাকে। এগুলোতে থাকে পাতলাপ্লেট যা অনেক বেশি কারেন্ট এমপিয়ার তৈরি করতে পারে।
ইউপিএস/আইপিএস এ
ডিপসাইকেল ব্যাটারি ব্যবহার হয়, স্টার্টিং
ব্যাটারি দিয়ে ইউপিএস/আইপিএস ভালসার্ভিস দিতে পারেনা।
এই ডিপ-সাইকেল ব্যাটারি আবার ২ ধরনেরঃ
১) ফ্লাডেড লেড-এসিড ব্যাটারী (Flooded Lead-Acid= FLA Battery) এবং
২) সীল্ড মেইন্টেন্যান্স
ফ্রী ব্যাটারী (SealedMaintenance Free = SMF Battery) ।
FLA ব্যাটারীতে ফ্লুইডবইলেক্ট্রোলাইট (তরল এসিড) ব্যবহার করা হয়। ব্যবহারে
এসিডের তরলের পরিমান কমে যায় তখন আবার ডিস্টিল্ড ওয়াটার দিতে
হয়। এর রক্ষনাবেক্ষন এর দরকার হয়।
সিল্ড ব্যাটারিতে নন-ফ্লুইড ইলেক্ট্রোলাইট
ব্যবহার করা হয়। দুর্ঘটনা এড়াতে এদের প্রকোষ্ঠ গুলিতে সেফটি ভাল্ব ও ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা দিয়ে সীল করে দেয়া হয়। এই ব্যাটারীর ইলেক্ট্রোলাইট পরিমাপ ও রক্ষনাবেক্ষন এর প্রয়োজন হয় না। ডিস্টিল্ড ওয়াটার দিতে হয় না। সিল্ড
ব্যাটারী আবার দুই ধরনের –
১) Absorbent Glass Mat (AGM) ব্যাটারি এবং
২) Gel Cell ব্যাটারি ।
AGM ব্যাটারীতে হাইবপারফরমেন্স প্লেট ও ইলেক্ট্রোলাইট সহ AGM টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়।
Gel cell ব্যাটারীতে হাই পারফরমেন্স প্লেট সহ অতি বিশুদ্ধ ফিউমড সিলিকা ও
সালফিউরিক এসিড থিক্সোট্রপিক পেস্ট(Gel) ব্যবহার করা হয়। জেল ব্যাটারী AGM ব্যাটারী অপেক্ষা অনেক বেশী বাড়তি দক্ষতা প্রদান করে।
তাই সীল্ড ব্যাটারীর মধ্যে জেল ব্যাটারী
বেশী ভাল। SMF ব্যাটারীর মধ্যে বিভিন্ন কোয়ালিটি অনুযায়ী আয়ুষ্কাল বিভিন্ন।
সাধারনত গাড়িতে, আই.পি.এস. এ এসিড ব্যাটারী বহুল ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের বাজারে রহিম-আফরোজ,
ভলভো, হ্যামকো প্রভৃতি কোম্পানীর ব্যাটারী পাওয়া যায়। লীড-এসিড
ব্যাটারী 2V, 4V, 6V, 8V, 12V এর হয়। বহুল ব্যবহারের কারনে এটি 6V, 12V এই বেশী পাওয়া যায়। 40Ah, 65Ah, 80Ah, 100Ah, 120Ah,
150Ah, 200Ah আরো বিভিন্ন এম্পিয়ারে পাওয়া যায়। এই ব্যাটারীগুলো সাধারনত প্লেট এর
হিসাবে বেশী পরিচিত।
যেমনঃ 9Ps, 11Ps, 17Ps, 21Ps,
25Ps, 27Ps ইত্যাদি। প্লেট এর হিসাবের কিছু গুরুত্ব রয়েছে। তবে কাজের জন্য
মুলত এম্পিয়ার এর হিসাব করা হয়।
এখন বেশি কারেন্ট এ চারজ দিলে কি হবে?
তত্ত্বগত ভাবে খারাপ কিছু হবার কথা ছিলো না বরং তারাতারি চারজ হবার কথা, কিন্ত বাস্তবে দেখা গেলো এসিড গ্যাস হয়ে উবে যাচ্ছে (গ্যাসিফিকেশন) আর যাচ্ছে ঘন হয়ে ফলে প্লেট গুলো যাচ্ছে গলে যা আর রিপেয়ার করা যায় না। আবার অল্প কারেন্ট এ চারজ দিলে লাগছে অনেক বেশি সময় যা আবার বাস্তব সম্মত না। তাই বিজ্ঞানী দের এমন একটা বাস্তব সম্মত আর গ্যাসিফিকেশন এর ঝামেলা মুক্ত এমন একটা সময় বের করা দরকার ছিলো, তার ফলাফল ই হলো ঐ ৮ ঘন্টা যা মোটামুটি ছোট বড় সব ব্যাটারি এর জন্যই প্রযোজ্য।
এই ব্যাটারি তে প্রতি সেল এ ধরা হয় ১,৭ ভোল্ট সরব নিম্ন আর সরবচ্চো ২,২ ভোল্ট যা পূরণ চার্যিত অবস্থায়
পাওয়া যায়। ফলে ১২ ভোল্ট ব্যাটারি তে চারজ দিলে হবে ৬x ২.২=১৪.৪
ভোল্ট আর চারজ শূন্য অবস্থায় ধরা হয় ৬x১.৭=১০.২ ভোল্ট যা বিভিন্ন পরীক্ষা করেই বিজ্ঞানী রা বের
করেছেন। (এখানে ৬ হলে সেল সংখ্যা)
এখন আসি চারজারের প্রসঙ্গে।
৩ ভাবে এই ব্যাটারি কে চারজ দেয়া যায়ঃ ফাস্ট/বুস্ট চারজিং
; ফ্ল্যাট চারজিং ; ট্রিকল চারজিং।
ফাস্ট চারজিং এ ব্যাটারি তে হাই কারেন্ট এ চারজ দিয়ে প্রায় ১১,৫- ১২ ভোল্ট করে পরে ফ্লাট চারজিং শুরু হয় ১৪.৪ ভোল্ট এর যা কম কারেন্ট এ আস্তে আস্তে চারজ দেয় আর ব্যাটারি ভোল্ট কে ১৪~১৪.৪ করে। তার পর শুরু হয় ট্রিকল চারজিং, যে সময় ব্যাটারি কে ১২ ভোল্ট এর নিচে নামা মাত্রই চারজ শুরু হয় আবার ভোল্ট বেড়ে ১২ হলেই চারজ অফ! এ শুধু ভালো চারজারের কথা কিন্তু বাজারের সস্তা সাধারন গুলো তে এমন সিস্টেম নেই। সব ফ্ল্যাট ভাবে ১৪.৪ ভোল্ট এ চারজ দেয় তাও ফিক্সড কারেন্ট এ। এতে আর কি খরচ বাঁচে, সাধারন মানুষের কেনার ক্ষমতায় থাকে।
100% কপি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন