ডিজিটাল দেশের নতুন চুরি। যা আপনার আমার মতো সাধারন মানুষের মাথায় জীবনেও আসবেনা। জানেন কি সেই চুরি? মানুষের কাছ থেকে বেশি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য বিদ্যুতের ভোল্ট ২২০ এর পরিবর্তে ১৮০ থেকে ২০০ ভোল্ট প্রদান করা হচ্ছে, যার ফলে অ্যাম্পিয়ার বেশি লাগে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে। আর এতে করে মিটার বেশি ঘোরে এবং বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে”। একজন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে এই কথাটা কতটুকু সত্য আর কতটুকু মিথ্যা সেটা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। এটা নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে আমাদের প্রথমে জানতে হবে, আমরা কোনটা ব্যাবহার করি, কারেন্ট নাকি ভোল্টেজ? ইলেক্ট্রিসিটি বিল কিভাবে হিসাব করা হয়?
আমরা কোনটা ব্যাবহার করি, কারেন্ট নাকি ভোল্টেজ?
আমরা যে সকল বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করি সেগুলো চলার জন্য কারেন্ট এবং ভোল্টেজ দুইটারই প্রয়োজন হয়। যদি আপনি খুব বেশি পরিমান কারেন্ট এবং শুন্য ভোল্টেজ দেন তাহলে কোন যন্ত্রই চলবেনা। আবার যদি খুব বেশি পরিমান ভোল্টেজ এবং শুন্য পরিমান কারেন্ট দেন তাহলেও কোন যন্ত্রই চলবেনা। কোন বৈদ্যুতিক যন্ত্র চালানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই দুইটাই দিতে হবে। আর এই দুইটার মিলে তৈরি হয় পাওয়ার (ক্ষমতা)। আর এই পাওয়ার বা ক্ষমতা হল কারেন্ট আর ভোল্টেজের গুনফল। তবে এখানে আগে ওহম’স ল দিয়ে কি পরিমান কারেন্ট লাগবে তা বের করে নিতে হবে।
ইলেক্ট্রিসিটি বিল কিভাবে হিসাব করা হয়?
ইলেক্ট্রিসিটি বিল হিসাব করা হয় আমরা কতটুকু পাওয়ার বা ক্ষমতা ব্যাবহার করেছি তার উপর ভিত্তি করে। আপনারা খেয়াল করলে হয়তো দেখবেন মিটারের উপরে KWh বা কিলোওয়াট-ঘন্টা লেখা থাকে। আর এই কিলোওয়াট-ঘন্টা দিয়েই আমাদের সম্পূর্ণ ইলেক্ট্রিসিটি বিল হিসাব করা হয়।
কিলোওয়াট-ঘন্টাঃ বিদুৎ শক্তির মাপের একটি সাধারন একক ওয়াট। বৈদ্যুতিক বাতিতে কত শক্তি ব্যায় হয় তা বোঝার জন্য ২৫, ৪০, ৬০, ১০০ প্রভৃতি ওয়াট লেখা থাকে। আর এই ওয়াট হলো, ভোল্টেজ আর কারেন্টের গুনফল। ওয়াট একটি ছোট একক, তাই বড় বড় যন্ত্রপাতি ইঞ্জিন ইত্যাদির ক্ষেত্রে কিলোওয়াট এককটি ব্যাবহার করা হয়। এক কিলোওয়াট বিদুৎ শক্তি এক ঘন্টা ধরে চললে যে পরিমান শক্তি ব্যায় হয় তাকে এক কিলোওয়াট-ঘন্টা বলে। বিলিংয়ের হিসাবটাও হয় কিলোওয়াট-ঘন্টায়।
যদি ৪০০ ওয়াটের কম্পিউটার ১০ ঘন্টা চললে খরচ হবে ৪০০ ওয়াট × ১০ ঘন্টা = ৪০০০ ওয়াট-ঘন্টা বা ৪ কিলোওয়াট-ঘন্টা। আর ১০০ ওয়াট লেখা একটা লাইট ২৪ ঘন্টা জ্বললে খরচ হবে ১০০ ওয়াট × ২৪ ঘন্টা = ২৪০০ ওয়াট-ঘন্টা বা ২.৪ কিলোওয়াট-ঘন্টা। তাহলে যদি প্রতি ইউনিটের দাম হয় ৫ টাকা তাহলে কম্পিউটারটি ১০ ঘন্টা চালাতে খরচ হবে ৪ × ৫ = ২০ টাকা। আর লাইট টি ২৪ ঘণ্টা চালাতে খরচ হবে ২.৪ × ৫ = ১২ টাকা।
ভোল্টেজ কমলে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে কি?
প্রত্যেক ডিভাইসের ইন্টারনাল রেসিস্ট্যান্স থাকে এবং সেটা পরিবর্তন হয়না। আর যখন ডিভাইসটি বানানো হয় সেটি কতো ভোল্টেজে অপারেট করবে সেটাও ঠিক করা হয়, এখন মনে করেন ১০০ ওয়াট এর একটি বাল্ব কে ২২০ ভোল্ট দিলে সেটা ১০০ ওয়াটই আউটপুট দিবে, কিন্তু ভোল্টেজ যখন কমে যাবে তার আউটপুটও তখন কমে যাবে। কারন ওহম’স ল থেকে আমরা জানি, V=IR.
কোন একটা ২২০ ভোল্টেজের লাইট যদি ১০০ ওয়াটের হয় তাহলে ২২০ ভোল্টেজের লাইনে সে প্রতি ঘণ্টায় ০.৪৫৪৫ অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট ফুরাবে (১০০/২২০=০.৪৫৪৫)। তাহলে ২২০ ভোল্টেজ × ০.৪৫৪৫ অ্যাম্পিয়ার = ১০০ ওয়াট। এখন এই লাইটটি যদি ২৪ ঘণ্টা চলে এবং বিদ্যুতের দাম যদি প্রতি ইউনিট ৫ টাকা হয় তাহলে বিল আসবে ১০০ ওয়াট × ২৪ ঘণ্টা= ২৪০০ওয়াট-ঘণ্টা/১০০০ = ২.৪ কিলোওয়াট-ঘণ্টা × ৫ টাকা = ১২ টাকা।
আবার সেই লাইটটি যদি ২২০ ভোল্টেজের পরিবর্তে ১৮০ ভোল্টেজ পায় তখন সেখানে পাওয়ার কমে যাবে ভোল্টেজ কমছে ঠিকই কিন্তু লাইট বা বাল্বের কোন পরিবর্তন নেই। সুতরাং এটার রেজিস্ট্যান্স একই থাকবে। সেই জন্য ভোল্টেজ কমে গেলে সেটা কারেন্টও কম টানবে ফলে অ্যাম্পিয়ার কমে যাবে। আর ভোল্টেজ এবং অ্যাম্পিয়ার কমে গেলে তখন পাওয়ার বা ওয়াটও কমে যাবে। সেই লাইটটি তখন ১০০ ওয়াট × (১৮০ভোল্টেজ/২২০ ভোল্টেজ) = ৮১ ওয়াট আউটপুট দিবে। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় সে ৮১ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করবে। তখন এই লাইটটি যদি ২৪ ঘণ্টা চলে এবং বিদ্যুতের দাম যদি প্রতি ইউনিট ৫ টাকা হয় তাহলে বিল আসবে ৮১ ওয়াট × ২৪ ঘণ্টা= ১৯৪৪ওয়াট-ঘণ্টা /১০০০ = ১.৯ কিলোওয়াট-ঘণ্টা × ৫ টাকা = ৯.৫টাকা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন